কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে পরিচিত এক শিরোনাম আবারও উঠে এসেছে—প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের ওপর অসন্তুষ্ট। গত দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলকে বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়ে এলেও, এই হামলা নিয়ে বাইডেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় প্রশাসনের অধীনেই হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড নিয়ে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে এই হামলাটি ছিল একটি বড় ধরনের কূটনৈতিক সংকট, কারণ কাতার যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর বৃহত্তম ঘাঁটিগুলোর একটির হোস্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত অবস্থান
হামলার পর হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে।3 যখন তারা মুখ খোলে, তখন সরাসরি নিন্দা জানানো থেকে বিরত থাকে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “একটি সার্বভৌম দেশ এবং ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারের অভ্যন্তরে একতরফা বোমা হামলা ইসরায়েল বা আমেরিকার লক্ষ্য পূরণে সহায়ক নয়।” তবে তিনি এও যোগ করেন, “হামাসকে নির্মূল করা, যারা গাজার মানুষের দুর্ভোগ থেকে লাভবান হয়েছে, তা একটি যোগ্য লক্ষ্য।”
এই মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে “দ্বিধাগ্রস্ত” ও “অস্পষ্ট” মনে হয়েছে।
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত মন্তব্য ও প্রতিশ্রুতি
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ঘটনায় “খুবই খারাপ” অনুভব করছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন এবং পরে সাংবাদিকদের বলেছেন যে তিনি ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডে “খুশি নন।” তিনি কাতারের আমিরের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা আর হবে না।
কিন্তু এর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং যুক্তরাষ্ট্রে তার রাষ্ট্রদূত উভয়েই কাতারে আরও হামলার হুমকি দেন। এই ঘটনাটি ট্রাম্পের দেওয়া প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
বিশ্লেষকদের উদ্বেগ: যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন
আরব সেন্টার ওয়াশিংটন ডিসির নির্বাহী পরিচালক খলিল জাহশান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ছিল পরস্পরবিরোধী, অর্থহীন, কূটনীতি ও সারবত্তার অভাব ছিল। এটি কোনো পরাশক্তির জন্য উপযুক্ত নয়।”
তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থতা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও ক্ষুণ্ন করবে এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। উল্লেখ্য, এই ঘটনার পর বুধবার পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি, যদিও কাতার যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র। সূত্র- আলজাজিরা