সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের কারণ
সাম্প্রতিক সময়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি নেতৃত্বাধীন সরকার ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দেশটির যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানায়, আগস্ট ২৮ তারিখ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে সচল সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে নিবন্ধনের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ), ইউটিউব, এক্স, রেডিট এবং লিংকডইনসহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান আবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়।
দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, নেপালে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী এবং ৩৬ লাখ ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী রয়েছেন। এসব প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই, বিশেষ করে যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতেন, তারা প্রথমে বিক্ষোভ শুরু করেন।
প্রতিবাদকারীদের কণ্ঠে ক্ষোভ: ‘আমরা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে’
শুরুর দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলেও এটি দ্রুতই একটি বড় দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। কাঠমান্ডুর ২৪ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ইউজান রাজভাণ্ডারি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে আমাদের আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে।”
ইক্ষামা তুমরোক নামের ২০ বছর বয়সি আরেক শিক্ষার্থী সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্যরা সরকারের এমন আচরণ মেনে নিয়েছে, কিন্তু এটি আমাদের প্রজন্মের মাধ্যমে শেষ হওয়া উচিত।”
বিক্ষোভ দমনে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান নিক্ষেপ করেছে। এ সময় এক তরুণ বিক্ষোভকারী অন্যদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ভেতর থেকে কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জনতার আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে। আজ আমরা ইতোমধ্যেই জয়ী হয়েছি।”
সরকারের দ্বৈত অবস্থান
রোববার দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং এর সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এর পরদিনই বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ সরকারের এই বক্তব্যের সঙ্গে বৈপরীত্য তৈরি করেছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে অনলাইন প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে টেলিগ্রাম নিষিদ্ধ করেছিল নেপাল। গত বছর টিকটক নিষিদ্ধ করা হলেও, আগস্টে টিকটক নেপালের আইন মানতে সম্মত হওয়ায় সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।