ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানে অন্তত ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পাশাপাশি সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের হাজারও কৃষকও ফসল হারিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ভয়াবহতা দিন দিন বাড়ছে, যার করুণ পরিণতি ভোগ করছে দুই দেশই।
গত এক সপ্তাহে প্রবল বৃষ্টিতে পাকিস্তানের জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিনটি নদী (রাভি, শতদ্রু ও চেনাব) ফুলে ওঠে। এতে দেশের কৃষি অঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরোপুরি ডুবে গেছে অনেক শহর।
ফসল-ঘরবাড়ি সব হারিয়ে অসহায় মানুষ
মুলতান থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক কামাল হায়দার জানিয়েছেন, “হাজার হাজার খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। মূল্যবান ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
পাকিস্তান মার্কাজি মুসলিম লীগের মুখপাত্র মোহাম্মদ আজমল বলেন, “ক্ষতির পরিমাণ অকল্পনীয়। আমাদের দল সারাদেশে দিন-রাত সহায়তা করছে। এই বিপর্যয় এতটাই বড় যে একা সরকার সামাল দিতে পারবে না।”
বন্যার্ত সোবিয়া বিবি বলেন, “এই বন্যায় আমরা সবকিছু হারিয়েছি—ঘরবাড়ি, ফসল, যা কিছু অর্জন করেছিলাম। সাহায্য সীমিত, আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অগণিত। বাচ্চারা খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বসে আছে। জরুরি ভিত্তিতে তাঁবুর প্রয়োজন।”
উদ্ধার অভিযানে নৌকাডুবি, ৫ জন নিহত
শনিবার পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে উদ্ধার অভিযানের সময় দুর্ঘটনায় পড়ে একটি নৌকা। পানির নিচে লুকানো কোনো বস্তুতে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় নৌকাটি। এতে এক বৃদ্ধা নারী ও চার শিশুর মৃত্যু হয়। আরও ১০ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পাঞ্জাব রিলিফ কমিশনার নাবিল জাভেদ জানান, শুধু নদীগুলোর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, জুন থেকে শুরু হওয়া মৌসুমি বন্যায় পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত ৯০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ভারতে একই চিত্র
এদিকে ভারতের পাঞ্জাবেও ভয়াবহ বন্যার কারণে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নিতে হয়েছে। অন্তত ১,৬২০ বর্গকিলোমিটার কৃষিজমি পানিতে ডুবে গেছে।
স্থানীয় কৃষক সতকার সিং বলেন, “আমরা যে ধান রোপণ করেছিলাম—সব শেষ হয়ে গেছে। এই অঞ্চলে দেশটির মোট বাসমতী চাল রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশ উৎপাদিত হয়। এখন আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।”
সূত্র- আলজাজিরা