নিরাপদ যাত্রার জন্য স্টিয়ারিং-এ চুম্বন: ইসলামী দৃষ্টিকোণে শিরক

নিরাপদ যাত্রার জন্য যানবাহনের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা বা ভক্তি দেখানো—যেমন স্টিয়ারিং-এ চুম্বন করা বা গাড়িকে স্পর্শ করে কপালে হাত দেওয়া—অনেকের মধ্যে একটি সাধারণ অভ্যাস। বিশেষ করে গাড়িচালক এবং যাত্রীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এই কাজটি করে থাকেন। তাদের উদ্দেশ্য থাকে যাত্রা পথে কোনো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া। তবে ধর্মীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস অনুযায়ী এই ধরনের কাজ শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করার সমতুল্য।

প্রচলিত ধারণা ও ইসলামী বিশ্বাস

অনেকের ধারণা, গাড়ির প্রতি ভক্তি দেখালে সেটি তাদের নিরাপদ রাখবে বা কোনো দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করবে। এই বিশ্বাস থেকে তারা এমন কাজ করেন। তারা মনে করেন, জড় বস্তুরও এমন ক্ষমতা আছে যা তাদের জীবন বাঁচাতে পারে।

কিন্তু ইসলামে এই ধরনের বিশ্বাস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই সকল ক্ষমতার মালিক এবং তিনিই জীবন ও মৃত্যুর নিয়ন্ত্রক। তিনিই একমাত্র সত্তা যিনি ক্ষতি বা উপকার করতে পারেন। অন্য কোনো বস্তুকে, তা যত মূল্যবান বা প্রয়োজনীয়ই হোক না কেন, আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা বা তার কাছ থেকে সাহায্য কামনা করাকে শিরক বলা হয়।

শিরক এবং তাওহীদের গুরুত্ব

ইসলামের মূল ভিত্তি হলো তাওহিদ বা আল্লাহর একত্ববাদ। এই বিশ্বাস অনুযায়ী, ইবাদত, ভক্তি, ভয় এবং সাহায্য প্রার্থনার একমাত্র যোগ্য সত্তা হলেন আল্লাহ। কোনো বস্তু বা ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো ধরনের উপকার বা নিরাপত্তা আশা করা যা কেবল আল্লাহর ক্ষমতাধীন, তা স্পষ্টতই শিরকের অন্তর্ভুক্ত। ধর্মীয় পণ্ডিতদের মতে, যখন কোনো চালক গাড়ি বা স্টিয়ারিং-এর প্রতি ভক্তি দেখিয়ে নিরাপদ থাকার আশা করেন, তখন তিনি মনের অজান্তেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে সেটির ওপর ভরসা করেন, যা গুরুতর গুনাহ।

নিরাপদ থাকার সঠিক ইসলামী পদ্ধতি

ইসলাম নিরাপদ যাত্রার জন্য মানুষকে কোনো অলৌকিক উপায়ে ভরসা করতে বলেনি, বরং এর জন্য দুটি পথ দেখিয়েছে। প্রথমত, বাস্তবসম্মত সতর্কতা অবলম্বন করা। এর মধ্যে রয়েছে গাড়ি ভালো অবস্থায় রাখা, ট্রাফিক আইন মেনে চলা এবং সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালানো। দ্বিতীয়ত, আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং তার কাছে সাহায্য ও নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা।

ভ্রমণের আগে মহানবী (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন:

‘সুবহানাল্লাজি সাখখারালানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকলিবুন।’

(অর্থ: তিনি পবিত্র, যিনি আমাদের জন্য এটিকে বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা তাকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আর আমরা আমাদের রবের কাছেই ফিরে যাবো।)

এই দোয়ার মাধ্যমে একজন মুসলিম প্রকাশ করেন যে, তার নিরাপত্তা গাড়ির ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। এই সচেতনতা থেকে বলা যায়, নিরাপদ যাত্রার জন্য গাড়ি বা স্টিয়ারিং-এর প্রতি ভক্তি না দেখিয়ে বরং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা এবং নিয়ম মেনে চলাই একজন মুসলিমের জন্য সঠিক পথ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top