ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে চলমান বিতর্ক দিল্লি হাইকোর্টের সাম্প্রতিক এক রায়ের পর আরও নতুন মাত্রা পেয়েছে। আদালত কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের (সিআইসি) সেই আদেশ বাতিল করে দিয়েছে, যেখানে মোদির ১৯৭৮ সালের বিএ ডিগ্রির তথ্য প্রকাশ করতে বলা হয়েছিল। এই রায়ে সমালোচকরা বলছেন, এটি জনমনে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
কেন বিতর্ক বাড়ছে?
মঙ্গলবার প্রকাশিত ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, হাইকোর্ট তার রায়ে উল্লেখ করেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে জানার আগ্রহ কোনো জনস্বার্থ নয়, বরং এটি কেবল ‘নিছক কৌতূহল’। তাই তথ্য অধিকার আইনের (আরটিআই) অধীনে এ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশযোগ্য নয়। আদালতের এই অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে, একজন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে জনস্বার্থের বাইরে থাকতে পারে?
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয় যে, ১৯৭৮ সালের একটি বিএ ডিগ্রির রেকর্ড তাদের কাছে রয়েছে, কিন্তু তা প্রকাশ্যে আনা উচিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইনগত সীমাবদ্ধতার কথা বললেও, সমালোচকদের মতে, যদি ডিগ্রির অস্তিত্ব সত্যিই নিশ্চিত হয়, তাহলে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে এত অনীহা কেন?
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অভিযোগ
এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল আম আদমি পার্টি (এএপি) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের একটি আরটিআই আবেদনের মাধ্যমে, যিনি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সে সময় সিআইসি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু এখন হাইকোর্টের রায়ে সেই নির্দেশ বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিজেপির বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছে। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করা কেবল কৌতূহল নয়, বরং জনগণের মৌলিক অধিকার।
এই রায় এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা চলছে। জনগণের একটি বড় অংশ মনে করছে, যদি একজন প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি নিয়ে এত গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়, তাহলে তা দেশের গণতন্ত্রের প্রতি এক ধরনের অশ্রদ্ধা। হাইকোর্টের এই রায় তথ্য অধিকার আইনকে দুর্বল করে দিয়েছে বলেও অনেকে মন্তব্য করছেন।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপিকে এই বিতর্ক থেকে মুক্তি দেওয়ার বদলে উল্টো এটিকে আরও বেশি সংবেদনশীল করে তুলেছে। তথ্য গোপন রাখার এই প্রবণতা মানুষের মনে সন্দেহ ও জিজ্ঞাসা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যা সরকারের স্বচ্ছতার দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।