নাসের হাসপাতালে হামলা এবং বিশ্বজুড়ে নিন্দা
সাম্প্রতিক সময়ে গাজার নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হন, যার মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিকও রয়েছেন। এই হামলার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কানাডা, মিশর, ইরান এবং সৌদি আরবের মতো দেশগুলো এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এই হামলাকে একটি “বর্বর যুদ্ধাপরাধ” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক সংগঠনগুলো, যেমন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) এবং ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন, হাসপাতালের কর্মীদের ওপর চালানো এই হামলায় গভীর “ক্ষোভ” ও “হতাশা” প্রকাশ করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই হামলাকে “দুঃখজনক ভুল” বলে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান
গাজায় চলমান সহিংসতা এবং বিশেষ করে নাসের হাসপাতালে হামলার পর ফিলিস্তিনিদের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার কেন্দ্র (আইসিজেপি) যুক্তরাজ্যের প্রতি ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতাদের ওপর অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে। আইসিজেপি এই হামলাকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যম ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে “পদ্ধতিগতভাবে লক্ষ্যবস্তু” করার একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
আইসিজেপি বলেছে, যুক্তরাজ্যের উচিত জরুরি ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহির আওতায় আনা। সংস্থাটি আরও উল্লেখ করেছে যে, এটি একটি ‘ডাবল-ট্যাপ’ হামলা ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নিশ্চিত করেছে যে প্রথম বিস্ফোরণের পর আহতদের সাহায্য করতে ছুটে আসা চারজন স্বাস্থ্যকর্মী দ্বিতীয় বিস্ফোরণে নিহত হন। আইসিজেপি’র তদন্তকারী দল জানিয়েছে, এই ধরনের ঘটনা গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ।
নাসের হাসপাতালে নিহত সাংবাদিকরা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, আল জাজিরা, মিডল ইস্ট আই এবং রয়টার্সের মতো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আইসিজেপি আরও জানিয়েছে যে মাত্র দুই সপ্তাহ আগে গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালেও আল জাজিরার সাংবাদিকরা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছিলেন।
সার্বিক হতাহতের সংখ্যা ও মানবিক সহায়তা
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬২ হাজার ৮১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬২৯ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়েছিল।
গাজায় খাদ্য ও মানবিক সহায়তার অপ্রতুলতা একটি বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা বারবার সতর্ক করে বলেছে যে, যদি দ্রুত পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ করা না হয়, তাহলে গাজায় দুর্ভিক্ষ অনিবার্য। ত্রাণ সরবরাহের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের আরোপিত বিধিনিষেধ এবং চলমান সংঘাতের কারণে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে, যা অনাহারজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ দিচ্ছে।