রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করল যুক্তরাষ্ট্র

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে যাওয়া এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোকেও ধন্যবাদ জানিয়েছে ওয়াশিংটন।

স্থানীয় সময় রোববার (২৪ আগস্ট) এক প্রেস বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন টমাস “টমি” পিগট বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুতির শিকার রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সংহতি জানাচ্ছে। আমরা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এবং মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোরও প্রশংসা করি।”

২০১৭ সালের ভয়াবহ রোহিঙ্গা সংকট

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের পর কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এর আগে থেকেই বাংলাদেশে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছিল। বর্তমানে নতুন করে আগতদেরসহ প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার ও আশপাশের ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পাশাপাশি প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে, যা সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান

জাতিসংঘ বহুবার বলেছে, এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী সংকট। রোহিঙ্গাদের টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সেনা অভ্যুত্থানের কারণে পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের ভূমিকায় প্রশংসা

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ মানবিক কারণে দীর্ঘ সাত বছর ধরে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কক্সবাজার ছাড়াও ভাসানচরে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তর করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল এ উদ্যোগকেও ইতিবাচকভাবে দেখছে।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বিশ্লেষকরা বলছেন, এত বিপুলসংখ্যক শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করায় অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান কেবল মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top