বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু ও বিশ্লেষণ
বৈঠকটি ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি ছিল যে তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন। যদিও ট্রাম্প এই আলোচনাকে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ বলে বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি স্বীকার করেছেন যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “একটি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নেই।”
অন্যদিকে, পুতিন এই বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ইউক্রেন ছাড়াও বাণিজ্য, আর্কটিক এবং মহাকাশ গবেষণার মতো বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলো এই বৈঠককে পুতিনের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছে, কারণ এটি তাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুনরায় গুরুত্ব দিয়েছে। হেগে যুদ্ধাপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও, মার্কিন মাটিতে তার লাল গালিচা সংবর্ধনা মস্কোর জন্য একটি বড় সাফল্য ছিল।
ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
বৈঠক নিয়ে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া মিশ্র। কিয়েভের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক পুতিনের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা ভেঙেছে এবং তাকে ‘বৈধতা’ দিয়েছে। ইউক্রেনীয় সামরিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন যে, এই বৈঠকের পর রাশিয়া তাদের প্রতিরক্ষা লাইন ভেদ করার জন্য আরও আগ্রাসী হামলা চালাতে পারে। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, যিনি এই বৈঠক থেকে বাদ পড়েছিলেন, তিনি কোনো ধরনের আঞ্চলিক ছাড়ের বিষয়ে তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে, ট্রাম্প বৈঠকের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার ‘দায়িত্ব’ ইউক্রেনের ওপর চাপিয়ে দিয়ে বলেন, “এখন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ওপরই নির্ভর করছে এটি সম্পন্ন করা।” যা ইউক্রেনের জন্য উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোও উদ্বেগে রয়েছে, কারণ তাদের ভয় ছিল ট্রাম্প হয়তো ইউক্রেনের সম্মতি ছাড়াই কোনো চুক্তি করে ফেলবেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রতিক্রিয়া
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমইএ) ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে, ‘বিশ্ব চায় এই সংঘাতের দ্রুত অবসান হোক।’ তবে, এই বৈঠকের আগে ট্রাম্পের ভারত-বিরোধী মন্তব্য এবং রাশিয়ান তেলের ব্যবসার কারণে ভারতের উপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
সব মিলিয়ে, আলাস্কা বৈঠকটি কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধান দিতে না পারলেও, এটি কূটনৈতিক পর্যায়ে নতুন আলোচনার পথ খুলে দিয়েছে। তবে ইউক্রেন এবং তাদের মিত্রদের আশঙ্কা, এই বৈঠক পুতিনকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাস দিয়েছে এবং তাকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করবে।