বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ: নির্বাচন, সংস্কার ও দলীয় প্রস্তুতি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রস্তুতি, আইনি সংস্কার এবং নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান নিয়ে আলোচনা চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেখানে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, সেখানে বড় রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের কৌশল সাজাতে ব্যস্ত। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতো নতুন রাজনৈতিক শক্তির কর্মকাণ্ডও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার ও প্রস্তুতি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসন্ন নির্বাচনের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এই খসড়ায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো, ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা। এখন কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলেও তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন না, বরং ‘না’ ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এছাড়া, নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনিয়মের কারণে কোনো একটি বা পুরো আসনের ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

ইসি জানিয়েছে, আরপিওতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার ফলে কমিশন চাইলে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োগ করতে পারবে। তবে, ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।

প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান

বিএনপি নেতারা নির্বাচন নিয়ে তাদের প্রস্তুতি ও কৌশল নিয়ে কথা বলছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা চান না কেউ জোর করে ক্ষমতায় এসেছে, এমন অভিযোগ উঠুক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াতারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতাদের ঘিরেও নানা আলোচনা চলছে।

আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে বিভিন্ন সংবাদপত্রে বলা হচ্ছে যে, দলটি এখনো নিজেদের গুছিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে। কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, ১৫ আগস্টের মতো চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকেও ফিরে আসার ইতিহাস আওয়ামী লীগের আছে। তবে, অনেকেই মনে করছেন, দলটি তাদের অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব ও নতুন দলের উত্থান

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বর্তমানে রাজনীতিতে একটি নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন। এছাড়াও, দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ভারত থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।

এদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার সমালোচনা করেছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। তারা বলছেন, নারী সমাজের দীর্ঘদিনের দাবিকে অগ্রাহ্য করে এমন ‘পুরুষতান্ত্রিক পশ্চাৎপদ’ সিদ্ধান্ত হতাশাজনক।

সব মিলিয়ে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন নির্বাচন, সংস্কার ও নতুন মেরুকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেখানে পুরোনো দলগুলোর পাশাপাশি নতুন শক্তিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top