ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনি ফুটবল তারকা সুলেমান আল ওবেইদ নিহত হওয়ার পর ফুটবল বিশ্বে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেন সাম্প্রতিক সময়ে পর্তুগালের কিংবদন্তি ফুটবলার জর্জ কস্তার মৃত্যুতে যে পরিমাণ প্রতিক্রিয়া এবং শোক দেখা গিয়েছিল, সুলেমান আল ওবেইদের ক্ষেত্রে তা অনুপস্থিত। গাজার মানবিক সংকটের মধ্যেই তার এই মৃত্যু এবং বিশ্ব ফুটবলের তুলনামূলক নীরবতা এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মানবিক সাহায্য নিতে গিয়ে মৃত্যু
ফিলিস্তিন জাতীয় দলের সাবেক এই ফরোয়ার্ড, যিনি ‘ফিলিস্তিনের পেলে’ নামে পরিচিত ছিলেন, গত ৭ আগস্ট (বুধবার) গাজার রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত হন। ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ৪১ বছর বয়সী ওবেইদ তার পাঁচ সন্তানের জন্য মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময়ই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যুতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেছেন।
সুলেমান আল ওবেইদ তার গতি, দক্ষতা এবং অসাধারণ গোলের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি ফিলিস্তিন ফুটবলে ‘ব্ল্যাক পার্ল’, ‘দ্য গ্যাজেল’ এবং ‘হেনরি অব প্যালেস্টাইন’-এর মতো নামেও পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে ফিলিস্তিনে খেলাধুলা এবং স্কাউটিং-সংশ্লিষ্ট ৬২২ জনের বেশি ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পর্তুগিজ ফুটবল কিংবদন্তি জর্জ কস্তার মৃত্যু ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে, এর মাত্র কয়েকদিন আগে পর্তুগালের কিংবদন্তি ফুটবলার এবং পোর্তোর সাবেক অধিনায়ক জর্জ কস্তা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৫৩ বছর বয়সে মারা যান। ২০০৪ সালে তার নেতৃত্বে পোর্তো উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছিল।
কস্তার মৃত্যুতে বিশ্ব ফুটবল শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। উয়েফা প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার সেফেরিন, সাবেক কোচ হোসে মরিনহো এবং বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ক্লাব ও খেলোয়াড়রা তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করেন। তার মৃত্যু সংবাদ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়।
নীরবতা ও বিতর্কের কারণ
মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন প্রশ্ন উঠেছে, কেন একই সময়ে দুজন ফুটবলার মারা গেলেও তাদের প্রতি বিশ্ব ফুটবলের প্রতিক্রিয়া এতটা ভিন্ন ছিল। সমালোচকদের মতে, ফিলিস্তিনি ফুটবলারের মৃত্যুটি গাজায় চলমান সংঘাতের একটি অংশ হওয়ায় অনেকেই রাজনৈতিক কারণে এ বিষয়ে কথা বলতে দ্বিধাগ্রস্ত। আন্তর্জাতিক ফুটবল সংস্থা ফিফা এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, যা অনেকের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এটি খেলাধুলায় রাজনীতির প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের পক্ষপাতমূলক কভারেজ নিয়ে চলমান বিতর্কের একটি নতুন উদাহরণ হিসেবে সামনে এসেছে।