ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত হল কমিটির প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে তিনি এই ঘোষণা দেন। তবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের এই ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতির পূর্ণ অবসানের দাবিতে ছয় দফা দাবি পেশ করেছেন।

উপাচার্যের ঘোষণা ও প্রশাসনের পদক্ষেপ

শুক্রবার ঢাবির ১৮টি হলে কমিটি ঘোষণা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এরপরই বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন এবং রাত ১টার পর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। আন্দোলনের মুখে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটিই বহাল থাকবে। তিনি আরও জানান, প্রত্যেক হল প্রশাসন এই নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে জানান, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার লক্ষ্যে রোববার সকাল ১১টায় প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। এছাড়া, প্রশাসন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করবে বলে তিনি জানান।

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি

উপাচার্যের ঘোষণার পরও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে এবং ছয় দফা দাবি তুলে ধরে। এই দাবিতে তারা বলেন যে, উপাচার্যের এই ঘোষণা তাদের কাছে যথেষ্ট নয় এবং তারা ছাত্ররাজনীতির সম্পূর্ণ অবসান চান। তাদের ছয় দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • ছাত্রদল কেন হল কমিটি দিয়েছে, সে বিষয়ে উপাচার্যকে জবাব দিতে হবে।
  • ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদল, শিবির, বাগছাস ও বামসহ সকল গুপ্ত কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এরিয়ায় রাজনীতির সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে ছাত্ররাজনীতির একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দিতে হবে।
  • ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব হল কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে।
  • হল প্রভোস্টদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে।
  • দ্রুত ডাকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা ‘এ মুহূর্তে খবর এলো, হল রাজনীতি নিষিদ্ধ হলো’ এবং ‘গণরুমের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দিতে থাকেন।

ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ সংকট

এদিকে, ছাত্রদলের নতুন ঘোষিত হল কমিটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কমিটিতে পদ পাওয়া ছয়জনকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। এই অভ্যন্তরীণ সংকটও চলমান বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top