জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলার আনুষ্ঠানিক শুনানি শুরু হয়েছে। আজ রোববার (৩ আগস্ট) এই মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানি শুরুর আগে ট্রাইব্যুনালের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান
‘ঐতিহাসিক দিন’ আখ্যায়িত করে অ্যাটর্নি জেনারেলের মন্তব্য
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আজকের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যায়িত করে তার বক্তব্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মতো কোনো স্বৈরাচারের জন্ম হয়নি। তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী স্বৈরাচার।” বেলা সোয়া ১১টার দিকে আদালতে শুনানি শুরু হয় এবং চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম তার সূচনা বক্তব্য শুরুতেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল তার সূচনা বক্তব্যে আরও বলেন, “স্বৈরাচারদের সমিতি করা হলে, শেখ হাসিনা সভাপতি হতে পারেন। মিথ্যার পিএইচডি করার জন্য হিটলারও হয়তো তার কাছে আসতেন। আমাদের কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ নেই। আমরা অপরাধের বিরুদ্ধে এসেছি। আমরা ন্যায়বিচার চাই, দেশের মানুষের স্বপ্নের বিচার চাই। আমরা ন্যায়বিচার চাইবো, ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়েই আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি চাইবো। যুগ সন্ধিক্ষণে ন্যায়বিচারের জন্য দাঁড়িয়েছি। শুধু রাষ্ট্রপক্ষ নয়, সকলে ন্যায়বিচার পাবেন।” তিনি এ সময় পৃথিবীর বিভিন্ন স্বৈরাচারের পরিণতি আদালতের সামনে তুলে ধরেন।
‘খুনের রাজনীতি’ বন্ধের অঙ্গীকার ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা
মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের আগামী দিনের জন্য এমনভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে; যাতে ভবিষ্যতে এখানে আর খুনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। আমাদের ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ক্ষোভ নেই, অপরাধের বিচার চাইতে এসেছি। অপরাধী এখানে ব্যক্তি, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলের বিচারও হতে পারে। আবু সাঈদ যে বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়ে গেছে, এই বিচার হবে সে বাংলাদেশের ভীত।”
এ সময় ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “এই বিচার অতীতের হিসাব চুকানোর চেষ্টা নয়, এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দৃপ্ত পদক্ষেপ। যতই কেউ ক্ষমতাধর হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আসামির অনুপস্থিতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাধা হবে না। আসামির ইচ্ছাকৃত পলায়ন এবং বিদেশি রাষ্ট্রের নিলির্প্ততা ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বাধা হবে না। এই বিচারের প্রতিটি ধাপ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, এই বিচার হবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্পৃহার অঙ্গীকার।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাসহ চানখারপুল কেন্দ্রিক আরও তিনটি মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে।