জুলাই অভ্যুত্থান দমনে রাজনৈতিক নির্দেশনা: সাবেক আইজিপি’র জবানবন্দিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ

সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সম্প্রতি এক জবানবন্দিতে জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে সরকারের বিভিন্ন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছেন। ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেওয়া তার এই জবানবন্দিতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য, যা তৎকালীন সরকারের দমন-পীড়ন নীতির ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে।

হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও ‘ব্লক রেইড’র নেপথ্যে রাজনৈতিক নির্দেশনা

আল-মামুনের জবানবন্দি অনুযায়ী, অভ্যুত্থান দমনের জন্য হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর এবং ছাত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘ব্লক রেইড’ চালানোর সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি জানান, আন্দোলন দমনের কৌশল নির্ধারণের জন্য তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে নিয়মিত রাতভর বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো। এসব বৈঠকে শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনায় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এই তথ্যগুলো তৎকালীন সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্টতা নির্দেশ করে।

২০১৮ সালের ‘নিশি রাতের ভোট’ ও গোপন বন্দিশিবির

জবানবন্দিতে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন, যা ‘নিশি রাতের ভোট’ নামে পরিচিত, সেই সম্পর্কেও আল-মামুন তথ্য দেন। তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছিল।

এছাড়াও, আল-মামুন, যিনি ২০২২ সাল থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত আইজিপি হিসেবে এবং তার আগে র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি র্যাব পরিচালিত গুম এবং গোপন বন্দিশিবির সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করেছেন। তার জবানবন্দি অনুযায়ী, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের অপহরণ, জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন এবং গোপন স্থাপনায় আটক রাখার একটি প্রচলিত সংস্কৃতি র্যাবের মধ্যে বিদ্যমান ছিল।

উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ইঙ্গিত

এই সব সিদ্ধান্ত ও অপারেশনে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার জড়িত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ডিএমপি কমিশনার এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন, যেমন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাদের সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল বলে জবানবন্দিতে উঠে এসেছে।

এই জবানবন্দি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে সংঘটিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ওপর নতুন করে আলোকপাত করেছে এবং এর ফলে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top