রাষ্ট্র মেরামত, সুশাসন এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এসেছে, তা হারালে আগামী কয়েক দশকে আর এমন সুযোগ নাও আসতে পারে—এমন মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত সরকারি সার্ভিস অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে ২০০৯ সালের পর ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার অনেক ইতিবাচক অধ্যাদেশ বাতিল করে দেয়। এবার যে আইন তৈরি হচ্ছে, তা ভবিষ্যতের সরকারগুলোর জন্য সহজে বাতিলযোগ্য হবে না। কারণ, এই আইন প্রণয়নের পেছনে রয়েছে তরুণদের রক্ত, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এবং অসংখ্য ত্যাগের ইতিহাস।
তিনি মনে করেন, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৯১-এর গণতান্ত্রিক উত্তরণ কিংবা ২০০৮ সালের পরিবর্তনের চেয়েও এবারের সুযোগটি অনেক বড়। কারণ, এতবড় রক্তক্ষয় ও আত্মত্যাগ আগে দেখা যায়নি। তাই এই মুহূর্তে গৃহীত সংস্কার উদ্যোগ যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আর কোনো সংস্কারের সম্ভাবনা দেখা যাবে না।
আলোচনার সময় আসিফ নজরুল বলেন, সরকারি আইনজীবীদের বেতন কম হওয়ায় অনেক সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। যদিও সবাই দুর্নীতিপরায়ণ নন, তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে যারা প্রতিপক্ষের কাছ থেকেও অর্থ গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কেরিয়ার প্রসিকিউশন সার্ভিস চালুর দাবি রয়েছে, যার কিছুটা বাস্তবায়ন ২০০৮ সালে হয়েছিল। তবে তখন সেটা অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল বলে টেকেনি। তাই এবার ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, যেকোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাস্তবতা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করতে হবে। রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে এককভাবে কেরিয়ার সার্ভিস গড়ে তোলা বাস্তবসম্মত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আশাবাদ ব্যক্ত করেন, অংশগ্রহণমূলক আলোচনা ও স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে একটি কার্যকর ও টেকসই আইন প্রণয়ন সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, সংসদ সদস্যদের মান বা যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট, তাদের মতামত থেকেই প্রকৃত অর্থে উন্নত আইন তৈরি করা সম্ভব।