মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস: কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন। তার এই গুরুত্বপূর্ণ সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এই সফরের প্রস্তুতি হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম গত ২৪ ও ২৫ জুলাই মালয়েশিয়া সফর করে ২৬ জুলাই দেশে ফিরেছেন। কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়া অবস্থানকালে পররাষ্ট্র সচিব দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব জেনারেল আমরান মোহাম্মদ জিনের সঙ্গে কুয়ালালামপুরে এক বৈঠকে মিলিত হন।

উভয়পক্ষ এই সাক্ষাতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘদিনের উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে পুনরায় নিশ্চিত করে। তারা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পারস্পরিক সমন্বয় জোরদার করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের আসন্ন মালয়েশিয়া সফরের প্রস্তুতির পাশাপাশি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, এলএনজি খাতে অংশীদারত্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, আসিয়ান ফোরামে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সম্পর্ক এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দুই পক্ষ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকার তুলে ধরে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টার এই আসন্ন সফর দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। এই বৈঠককে উচ্চপর্যায়ের সফরের পূর্বপ্রস্তুতি ও কূটনৈতিক ভিত্তি হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ড. ইউনূসের কুয়ালালামপুর সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে একটি চুক্তি এবং চারটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই করতে আগ্রহী মালয়েশিয়া। এর মধ্যে জ্বালানি খাতে একটি সমঝোতা স্মারক নিয়ে আলোচনা চললেও, সেটি চূড়ান্ত না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে সেমিকন্ডাক্টর, ফরেন সার্ভিস একাডেমি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে পৃথক সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।

মূলত জুলাই মাসে প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফরের কথা থাকলেও, বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে মালয়েশিয়ার অনুরোধে এটি আগস্টে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সফর হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ড. ইউনূস এ পর্যন্ত ১০টি দেশ সফর করেছেন। সর্বশেষ গত জুনে তিনি যুক্তরাজ্য সফর করেন, তবে সেই সফরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বা ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়নি। এর আগে, প্রধান উপদেষ্টা চীন-জাপান সফর করলেও সেগুলো পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে ড. ইউনূস মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বিপক্ষীয় সফর এবং ‘বন্ধু’ আনোয়ার ইব্রাহিমের আতিথেয়তায় প্রধান উপদেষ্টার এই সফরটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হবে। দুই সরকারপ্রধানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ থাকবে। বিশেষ করে শ্রমবাজার, রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমার ইস্যু, কৃষি, জ্বালানি, শিক্ষা, হালাল অর্থনীতি, সুনীল অর্থনীতি, আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং নতুন সম্ভাবনা নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, মালয়েশিয়া সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টার ইন্দোনেশিয়া সফরেরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত এটি চূড়ান্ত হয়নি এবং সফরটি না হওয়ার ইঙ্গিতও আছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাস পর অক্টোবরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকা সফর করেছিলেন। ওই সফরটি ছিল অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে কোনো বিদেশি সরকারপ্রধানের প্রথম উচ্চ পর্যায়ের সফর।

হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বার্ষিক বাণিজ্য প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার সঙ্গে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে আগ্রহী। প্রধান উপদেষ্টার এই সফরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পাশাপাশি শ্রমবাজার নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top