থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে উত্তেজনা: ভূখণ্ড বিবাদ ও কূটনৈতিক সংকট

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিবাদ আবারও সহিংস রূপ নিয়েছে, যা গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার (২৫ জুলাই) পর্যন্ত তীব্র আকার ধারণ করেছে। দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা মূলত ১৯০৭ সালের ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলের একটি মানচিত্র এবং বিতর্কিত বনভূমি নিয়ে চলে আসা ভূখণ্ডগত দাবিকে কেন্দ্র করে। কম্বোডিয়া ওই মানচিত্রের ভিত্তিতে কিছু অঞ্চলের দাবি জানালেও, থাইল্যান্ড তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে। বিশেষ করে, প্রিয়া ভিহেয়ার মন্দিরের মালিকানা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) ১৯৬২ এবং ২০১৩ সালে কম্বোডিয়ার পক্ষে রায় দিলেও, বিতর্ক থামেনি।
সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণ ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ

উত্তেজনার এই নতুন ঢেউ শুরু হয় মে মাসে, যখন একজন কম্বোডিয়ান সৈনিক নিহত হন। প্রাথমিক পর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করা হলেও, থাইল্যান্ডের কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপের পর উত্তেজনা আবার বাড়তে থাকে। এর প্রতিক্রিয়ায় কম্বোডিয়া থাই চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং জ্বালানি, গ্যাস, ফল ও সবজির আমদানি নিষিদ্ধ করে।

ভূমিকম্পের পর থাই সৈন্যদের আহত হওয়ার ঘটনায় সংঘাত আরও তীব্র হয়, যার জন্য থাইল্যান্ড কম্বোডিয়াকে দায়ী করে। যদিও কম্বোডিয়া এই দায় অস্বীকার করে। এই ঘটনার জের ধরে থাইল্যান্ড কম্বোডিয়া থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে এবং কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে, যার ফলে কূটনৈতিক সম্পর্ক অবনমিত হয়।

থাই রাজনীতিতে প্রভাব ও মধ্যস্থতার প্রস্তাব

এই সীমান্ত সংঘাত থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী পেতোংতার্ন সিনাওয়াত্রা একটি ফাঁস হওয়া ফোন কলে তার নিজের সেনাবাহিনীর সমালোচনা এবং কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ সম্বোধন করার পর তাকে বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং মালয়েশিয়া এই বিবাদ সমাধানে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে থাইল্যান্ড তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে। এই চলমান উত্তেজনা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top