প্রকৃতিতে এমন কিছু ফল রয়েছে যা তার অসাধারণ গুণাবলীর জন্য ‘অলৌকিক’ বা ‘মিরাকল’ উপাধি পেয়ে থাকে। এমনই একটি ফল হলো ‘মিরাকল বেরি’, যা বৈজ্ঞানিকভাবে Synsepalum dulcificum নামে পরিচিত। এই ক্ষুদ্র লাল বেরিটি তার বিস্ময়কর ক্ষমতা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনায় এসেছে – এটি খাওয়ার পর টক জাতীয় খাবারকে মিষ্টিতে পরিণত করার এক অদ্ভুত ক্ষমতা রাখে।
স্বাদের জাদুকরী পরিবর্তন:
মিরাকল বেরির এই অনন্য ক্ষমতার পেছনে রয়েছে ‘মিরাকুলিন’ নামক একটি গ্লাইকোপ্রোটিন। এই ফল খাওয়ার পর মিরাকুলিন জিহ্বার স্বাদ কোরকগুলোর সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে যায়। যখন এর পর কোনো টক বা অ্যাসিডিক খাবার খাওয়া হয়, তখন মিরাকুলিন ওই টক স্বাদকে মিষ্টি স্বাদে রূপান্তরিত করে। যেমন, লেবু বা ভিনেগার যা তীব্র টক, তা মিরাকল বেরি খাওয়ার পর চিনির মতো মিষ্টি মনে হতে পারে। এই প্রভাব প্রায় ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত ব্যবহার:
মিরাকল বেরির এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য এটি স্বাস্থ্য ও খাদ্য শিল্পে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হতে পারে, কারণ এটি নিজেই প্রায় ক্যালরিবিহীন এবং রক্তে শর্করার মাত্রায় কোনো প্রভাব ফেলে না। এছাড়া, কেমোথেরাপি রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায়শই মুখে রুচি চলে যায় বা ধাতব স্বাদ অনুভূত হয়, যা তাদের খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি করে। মিরাকল বেরি এই সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে, কারণ এটি খাবারের স্বাদ উন্নত করে রোগীদের পুষ্টি গ্রহণে উৎসাহিত করতে পারে। ওজন কমাতেও এটি কার্যকর হতে পারে, কারণ এটি মিষ্টি খাবারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে ক্যালরি গ্রহণ কমায়।
মিরাকল বেরি মূলত পশ্চিম আফ্রিকার স্থানীয় ফল। এটি তাজা খাওয়া যেতে পারে অথবা ট্যাবলেট আকারেও পাওয়া যায়, যা সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য সুবিধা করে। যদিও এর বাণিজ্যিক উৎপাদন এখনো সীমিত, তবে এর অনন্য গুণাবলীর কারণে এটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে এবং খাদ্য উদ্ভাবকদের কাছে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এই ‘অলৌকিক ফল’ ভবিষ্যৎ খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।