ভারত থেকে বাঙালি মুসলিমদের বাংলাদেশে বিতাড়ন: মানবাধিকার সংস্থার তীব্র নিন্দা

নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) অভিযোগ করেছে যে ভারত সরকার শত শত বাঙালি মুসলিমকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বাংলাদেশে বিতাড়িত করছে। সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিতাড়িতদের মধ্যে অনেকেই আসলে ভারতীয় নাগরিক, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর বাসিন্দা।

এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মে মাস থেকে বিজেপি সরকার ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ’-এর নামে বাঙালি মুসলিমদের লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে। সংস্থাটি অবিলম্বে এই বেআইনি বিতাড়ন বন্ধের দাবি জানিয়েছে এবং সবার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া বিভাগের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেছেন, “ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ বৈষম্যমূলক এবং এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।” তিনি আরও যোগ করেন যে সরকারের এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করছে।

গত জুনে এইচআরডব্লিউ ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নেয়, যাদের মধ্যে কেউ কেউ ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত মে-জুনে ১,৫০০-এর বেশি মুসলিমকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, যাদের মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছেন।

বিতাড়নের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) অনেককে মারধর ও হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। আসামের এক শিক্ষক খায়রুল ইসলাম (৫১) জানান, তাকে ১৪ জনের সঙ্গে হাত বেঁধে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল।

বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ভারতের এই কর্মকাণ্ডকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে যে শুধুমাত্র প্রমাণিত বাংলাদেশি নাগরিকদেরই গ্রহণ করা হবে।

এইচআরডব্লিউ ভারত সরকারকে তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, “কাউকে বিতাড়নের আগে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এবং নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ দিতে হবে।”

এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও হস্তক্ষেপ কামনা করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top