ভারতের নয়াদিল্লিতে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলন শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ‘বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে’ এমন অভিযোগ উত্থাপনের উদ্দেশ্যে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলেও, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত সরকারের সায় না মেলায় এটি স্থগিত করা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে উপস্থিত সাংবাদিকদের ‘আপাতত স্থগিত’ বলে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
‘অস্তিত্বহীন’ সংগঠনের নামে আয়োজন
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (বিএইচআরডব্লিউ)’ নামে একটি অস্তিত্বহীন সংগঠনের ব্যানারে বুধবার (তারিখ উল্লেখ নেই, তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শেষার্ধ্ব) স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টায় এই সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এর আয়োজক ছিলেন মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, যিনি নিজেকে ওই সংগঠনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার মহাসচিব বলে দাবি করেন। আয়োজকরা জানিয়েছিলেন, সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের ‘গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও মন্ত্রীরা’ গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ‘সহিংসতা’ এবং দেশের ‘গণহত্যা’র প্রসঙ্গে বক্তব্য দেবেন।
তবে সাংবাদিকরা সম্মেলনস্থলে জড়ো হওয়ার পর মিস্টার সিদ্দিকী এক বিবৃতিতে জানান, ঢাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের সম্মানে অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে। ওই দুর্ঘটনায় ৩৫ জনের বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই শিশু, প্রাণ হারান এবং প্রায় ১৭০ জন আহত হন।
কূটনৈতিক তৎপরতা ও স্থগিতের কারণ
জানা গেছে, গত কয়েক দিনে আওয়ামী লীগের একাধিক সাবেক নেতা — যেমন ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাসান মাহমুদ, ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল — দিল্লি সফর করেছেন। তাদের কয়েকজনের এই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী এই ‘গভীর শোকাবহ পরিস্থিতিতে এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে’ সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করার কঠিন সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এদিকে, দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই সম্মেলন নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনানুষ্ঠানিকভাবে উদ্বেগ জানিয়েছিল। বিশেষ করে, আগামী ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেশী দেশের মাটিতে এমন একটি বিতর্কিত অনুষ্ঠান ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চলমান প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে — এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক এই ‘বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আলী সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনাটি ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।