দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে হঠাৎ করেই ডলারের দামে বড় ধরনের পতন ঘটেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আনুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দাম কমেছে তিন টাকা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে ডলারের জোগান বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ছন্দপতন হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ জুলাই ডলারের গড় বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা ৭৩ পয়সা। তবে সোমবার (১৪ জুলাই) বেলা ১১টা পর্যন্ত তা কমে ১১৯ টাকা ৭২ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত ৩০ জুন ডলারের লেনদেন হয়েছিল ১২২ টাকা ৯০ পয়সায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা:
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানান, ডলারের বিনিময় হার মূলত চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেশ ভালো। যে পরিমাণে ডলারের চাহিদা রয়েছে, সেই তুলনায় সরবরাহ বেশি, আর এ কারণেই ডলারের দর কমছে।
তিনি আরও বলেন, ডলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৭১ মিলিয়ন ডলার কিনেছে, যাতে রপ্তানিকারক ও রেমিট্যান্স প্রেরণকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
জোগান বৃদ্ধির কারণ:
খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গত অর্থবছরে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা এই ডলারের জোগান বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে; এ মাসের প্রথম ১২ দিনেই ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এছাড়া, সম্প্রতি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা থেকে বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা পেয়েছে। এসব সম্মিলিত প্রভাবের কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বিনিময় হারের নিম্নমুখী প্রবণতায়।
রিজার্ভের চিত্র:
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ জুলাই পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৯.৬০ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, এই রিজার্ভের পরিমাণ ২৬.৭০ বিলিয়ন ডলার। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১০ জুলাই দেশের মোট রিজার্ভ ছিল ২৬.২৭ বিলিয়ন ডলার, যা আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ছিল ২১.০৬ বিলিয়ন ডলার। এই মুহূর্তে ডলারের দাম কমে আসা অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে।