নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম: ২০২৭ সাল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে কার্যকর হবে পরিমার্জিত কারিকুলাম

লাদেশ সরকার ২০২৭ সাল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরিমার্জিত নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম (কারিকুলাম) চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই নতুন শিক্ষাক্রম পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিকের দশম শ্রেণি এবং উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই এই নতুন কারিকুলামের একটি প্রাথমিক কাঠামো বা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হবে।

জুলাই আন্দোলনের প্রতিফলন এবং ভিত্তি নিয়ে আলোচনা

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, এই পরিমার্জিত কারিকুলামে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের আন্দোলনের প্রতিফলন বড় পরিসরে থাকবে। তবে নতুন কারিকুলামের ভিত্তি হিসেবে ২০১২ সালের সংস্করণ নেওয়া হবে, নাকি ২০২২ সালের কারিকুলামকে ধরে এগোনো হবে—তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।

উল্লেখ্য, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৩ সাল থেকে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ২০২২ সালের কারিকুলাম বাস্তবায়ন শুরু করেছিল। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তা ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়। ২০২৫ সাল নাগাদ দশম শ্রেণি এবং ২০২৭ সাল নাগাদ দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তা চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার মাধ্যমিক স্তরে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আবারও ২০১২ সালের পুরনো কারিকুলামে ফিরে যায়। যদিও প্রাথমিক স্তরে ২০২২ সালের কারিকুলাম বহাল রাখা হয়েছে।

বর্তমান সরকার ২০২৭ সাল থেকে নতুনভাবে পরিমার্জিত কারিকুলাম চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে। শুরুতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এটি কার্যকর হবে, এরপর প্রতি বছর এক শ্রেণি করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “নতুন কারিকুলাম এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্রেমওয়ার্ক চূড়ান্ত করা হবে, যাতে ২০২৭ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু করা যায়।”

২০১২ না ২০২২ সালের কারিকুলামকে ভিত্তি ধরে পরিমার্জনা করা হবে—এ প্রশ্নে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, “দেশপ্রেম, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ—এই মৌলিক চেতনার জায়গাগুলো অপরিবর্তনীয়। তবে শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আসবে। সেইসঙ্গে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনেরও বড় প্রতিফলন থাকবে নতুন কারিকুলামে।”

এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক মো. সাহতাব উদ্দিন বলেন, “এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি যদি ২০১২ অথবা ২০২২ সালের কারিকুলাম পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেয়, তা অনুসারে চূড়ান্ত রূপ পাবে নতুন কারিকুলাম। এখনও ‘নিড অ্যাসেসমেন্ট’ বা কাঠামো চূড়ান্ত হয়নি, তাই আগে মন্তব্য করা সঠিক হবে না।”

গত ৪ জুন এক মতবিনিময় সভায় শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা সি আর আবরার বলেন, “আমরা ২০২৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য একটি নতুন শিক্ষা কার্যক্রম প্রস্তুত করছি। প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তি, মানসম্মত শিক্ষা—এসব বিষয় সেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বর্তমান শিক্ষাক্রমের বাইরে এসে মুক্ত চিন্তায় এগোতে হবে। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এগোনোর চেষ্টা করছি।”

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, “একসঙ্গে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কারিকুলাম পরিবর্তন কোনো সুচিন্তিত পদক্ষেপ নয়। তাই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই শুরু করে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হবে।”

২০২২ সালের কারিকুলাম এবং বিতর্ক

উল্লেখ্য, সাবেক সরকারের প্রণীত ২০২২ সালের কারিকুলামের মূল ভিত্তি ছিল—মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং সংবিধানের চার মূলনীতি—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

নতুন কারিকুলামে আউটকাম-ভিত্তিক শিক্ষাদান, শেখার পদ্ধতি এবং মূল্যায়নে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তবে শুরু থেকেই অভিভাবক ও শিক্ষকদের একটি অংশ এর বিরোধিতা করে আসছিল। তাদের মতে, কারিকুলাম বাস্তবায়নে চাপ ও বাস্তবতা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। অনেকে মনে করেন, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে এই অসন্তোষেরও বড় প্রভাব ছিল। সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top