৯টি পণ্যের স্থলপথে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত

নতুন করে বাংলাদেশ থেকে ৯টি পণ্যের স্থলপথে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত। গত ২৭ জুন, ২০২৫ শুক্রবার এক সরকারি প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর বিষয়টি রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যদিও সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দর ব্যবহার করে এসব পণ্য নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে, তবে বাংলাদেশের রপ্তানির বেশিরভাগই হয়ে থাকে স্থলপথে, ফলে কার্যত একটি বড় বাজার সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।

নিষিদ্ধ হওয়া পণ্যের তালিকায় রয়েছে: ফ্ল্যাক্স সুতার বর্জ্য, কাঁচা পাট, পাটের রোল, ফ্ল্যাক্স সুতা, পাটের সুতা, ফুড গ্রেড সুতা, লিনেন কাপড়, লিনেন-তুলার মিশ্রিত কাপড় এবং কম প্রক্রিয়াজাত বোনা কাপড়। এর মধ্যে কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের আধিক্য বেশি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিশ্বের ৮৮টি দেশে বাংলাদেশ থেকে এই ৯টি পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, যার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য ছিল ভারত। সেখানে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি ডলারের পণ্য, যা এ পণ্যের মোট রপ্তানির প্রায় ২৩ শতাংশ।

গত তিন মাসে ভারত এই নিয়ে তিন দফায় বাংলাদেশের পণ্যের উপর অশুল্ক নিষেধাজ্ঞা জারি করল। এর আগে মে মাসে স্থলপথে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, আসবাবপত্র, ফল ও কোমল পানীয়সহ বেশ কিছু পণ্যের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। এপ্রিল মাসে বাতিল করা হয় কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানির সুবিধা।

এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের প্রায় ১১৭টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ এবং নরসিংদীর জনতা জুট মিলস অন্যতম। পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ তাদের মোট রপ্তানির ৫০ শতাংশই ভারতীয় বাজারে করে থাকে।

বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) সভাপতি তাপস প্রামাণিক জানান, এই নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এর ফলে বাংলাদেশ থেকে পাট, সুতা ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে বড় ধাক্কা লাগবে। বিষয়টি বিশ্লেষণের জন্য ৩০ জুন বিজেএসএর একটি বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। এরপর সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করণীয় নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, “যদিও সমুদ্রপথ খোলা আছে, তবে ভারতের অভ্যন্তরে পশ্চিমবঙ্গে পণ্য সরবরাহ করতে গিয়ে যদি মুম্বাই হয়ে ঘুরে যেতে হয়, তা হলে রপ্তানির সময় ও খরচ দুটোই বহুগুণ বেড়ে যাবে।”

বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনায় বসুক এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানাক।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top