রেমিটেন্স peoplesnew ‍

বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভে ইতিবাচক গতি, প্রবাস আয়ের রেকর্ড অব্যাহত

অর্থনীতি ডেস্ক;

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ আবারও ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে। রেমিট্যান্সপ্রবাহের ধারাবাহিক ইতিবাচক ধারা ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পদক্ষেপের ফলে বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। রোববার (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংক এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর নতুন হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের আনুষ্ঠানিক পরিমাণ ধরা হয়েছে ২১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার

তবে ব্যবহারযোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ (নিট রিজার্ভ) আরও কিছুটা কম, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে ১৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এই হিসাবে এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস), ব্যাংকগুলোর ফরেক্স ক্লিয়ারিং ব্যালান্স এবং আকুর (Asian Clearing Union) পাওনা বাদ দিয়ে চূড়ান্ত হিসাব করা হয়েছে।

📈 প্রবাস আয়ে নতুন রেকর্ড

বিশ্লেষকরা বলছেন, রিজার্ভের ইতিবাচক এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো বৈধ রেমিট্যান্স। চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম ২৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। শুধু গত মার্চ মাসেই বাংলাদেশ রেমিট্যান্স আয়ে নতুন ইতিহাস গড়েছে — এক মাসে এসেছে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে দুই বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল:

  • জুলাই: ১.৯১ বিলিয়ন ডলার

  • আগস্ট: ২.২২ বিলিয়ন ডলার

  • সেপ্টেম্বর: ২.৪০ বিলিয়ন ডলার

  • অক্টোবর: ২.৩৯ বিলিয়ন ডলার

  • নভেম্বর: ২.২০ বিলিয়ন ডলার

  • ডিসেম্বর: ২.৬৪ বিলিয়ন ডলার

  • জানুয়ারি: ২.১৯ বিলিয়ন ডলার

  • ফেব্রুয়ারি: ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার

টানা সাত মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকে স্থিতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

🌎 রিজার্ভ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা

বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাধারণত একটি দেশের রিজার্ভ কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত থাকতে হয়। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে বাংলাদেশ তিন মাসেরও বেশি সময়ের আমদানি প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত উদ্যোগ, ব্যাংকিং খাতে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রণোদনা বৃদ্ধি এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের উৎসাহ — সবকিছু মিলিয়ে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার নতুন করে গতি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে অর্থনীতির আরও দৃঢ়তা অর্জনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top