জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা সপ্তম দিনে গড়িয়েছে। আজ (বুধবার, ২ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সকাল ১১টা ৮ মিনিটে এ বৈঠক শুরু হয়। আলোচনার মূল বিষয়গুলো হলো—নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিধান।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এসময় কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ড. আইয়ুব মিয়াও উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
২০টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কারের ২০টি প্রস্তাব নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নয়টি বিষয়ে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রস্তাবে পূর্ণ ঐকমত্য তৈরি হয়েছে এবং কয়েকটিতে আংশিক সমঝোতা হয়েছে। তবে কোনো প্রস্তাব এখনও আলোচনার বাইরে রাখা হয়নি।
এর আগে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
-
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন
-
বিরোধী দলকে সংসদীয় কমিটিতে নেতৃত্ব দেওয়া
-
নারীদের জন্য ১০০ আসনে সরাসরি ভোট
-
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ
-
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ
-
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন
-
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
-
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নির্ধারণ
-
সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি
এদের মধ্যে এনসিসির পরিবর্তে ‘সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি’ গঠনের একটি নতুন প্রস্তাব তোলা হয়েছে।
কীসে ঐকমত্য, কোথায় মতানৈক্য?
৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন এবং সংসদীয় কমিটিতে বিরোধী দলকে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব দেওয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল ১০ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়েও প্রাথমিকভাবে অধিকাংশ দলের মধ্যে মতৈক্য থাকলেও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি সংবিধানে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এ ধরনের নিয়োগ কমিটির বিধান রাখা না হয়, তাহলেই তারা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকালের সীমার বিষয়ে সমর্থন দেবে।
এখনও আলোচনার অপেক্ষায় যেসব বিষয়
কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনি এলাকা পুনর্নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো, সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি, জরুরি অবস্থা ঘোষণার নিয়ম, স্থানীয় সরকারে নারীর প্রতিনিধিত্ব, উচ্চকক্ষের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং জেলা সমন্বয় কাউন্সিল গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে শিগগিরই আলোচনা শুরু হবে।
এর আগে ২৯ জুনের বৈঠকে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম ১৬ জুলাই সবাই মিলে একটি ঐক্যমত্যে পৌঁছে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব। এখন সেই বাস্তবতা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি ও সদিচ্ছার ওপর।”