মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের ফলপ্রসূ ফোনালাপ: দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে জোর

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এক গুরুত্বপূর্ণ টেলিফোন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় ১৫ মিনিট স্থায়ী এই আলোচনায় দুই দেশের মধ্যকার গভীর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতিফলন দেখা গেছে, যা উভয় পক্ষের কাছেই উষ্ণ, সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং গঠনমূলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই ফোনালাপে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। এর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনা, বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কার প্রক্রিয়া, গণতান্ত্রিক উত্তরণের রূপরেখা, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহায়তা।

বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রম এবং আগামী বছরের শুরুতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এবং রেমিটেন্সের শীর্ষ উৎস। এই প্রেক্ষাপটে উভয় নেতা দ্রুত শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচন: ড. ইউনূস বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়ে পুনর্ব্যক্ত করেন যে, আগামী বছরের শুরুর দিকেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান সংলাপের মাধ্যমেই দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জন্য অত্যাবশ্যকীয় সংস্কারগুলো উঠে আসবে। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন বর্তমানে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে কঠোর পরিশ্রম করছে, যা পূর্ববর্তী সরকার ভেঙে দিয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন, আসন্ন নির্বাচনে দেশের তরুণ প্রজন্ম প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবে।

রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা: রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি ওয়াশিংটনের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনের জন্য ড. ইউনূস মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য সর্বোচ্চ মানবিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেন যে, রোহিঙ্গা সংকটের একটি কার্যকর সমাধান এবং তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়, এবং বাংলাদেশ এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

আলোচনায় ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়েও উভয় নেতা গুরুত্বপূর্ণ মতবিনিময় করেন। এই ফোনালাপ দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top