গাজায় আবারও ভয়াবহ হামলা, নিহত অন্তত ৯৫

গাজার বিভিন্ন স্থানে আবারও ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। সোমবার দিনের শুরুতেই একের পর এক হামলায় অন্তত ৯৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বেসামরিক এলাকাগুলোর মধ্যে এবার হামলার লক্ষ্য হয়েছে একটি জনপ্রিয় ক্যাফে, একটি স্কুল, খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র এবং একটি হাসপাতালের আঙিনা। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।

গাজা শহরের উত্তরে অবস্থিত সাগরপাড়ের আল-বাক্বা ক্যাফেতে হামলায় একসঙ্গে ৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সেখানে জন্মদিন উদযাপন করছিল অনেকে। সাংবাদিক ইসমাইল আবু হাতাব ও তার পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন নিহতদের মধ্যে।

এক প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াহিয়া শরীফ বলেন, “এই ক্যাফেটির কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না। সেখানে শুধু পরিবার ও শিশুদের নিয়ে আনন্দ করছিল লোকজন। হামলার দৃশ্য ছিল ভয়াবহ—মানুষ ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল।”

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার আগে কোনো ধরনের সতর্কতা দেওয়া হয়নি। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ক্যাফেটি মাটিতে মিশে গেছে।

এছাড়া গাজা শহরের জেইতুন এলাকায় একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে বিমান হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। তারা ত্রাণ সংগ্রহ করতে এসেছিলেন।

আরেকটি হামলা চালানো হয় ইয়াফা স্কুলে, যেখানে শরণার্থী পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, হামলার আগে মাত্র ৫ মিনিটের জন্য সরে যেতে বলা হয়।

মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের আল-আকসা হাসপাতালের আঙিনাতেও হামলা চালায় ইসরায়েল। সেখানে অনেক বাস্তুচ্যুত পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হাসপাতালের চত্বরে আতঙ্কে মানুষ ছুটোছুটি করছে, ভাঙচুর হয়েছে অস্থায়ী তাঁবু।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এই হামলা ‘সংবিধিবদ্ধ অপরাধ’ এবং এতে বহু রোগী ও আশ্রিত মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।

খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে হামলা, নিহত আরও ১৫

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)-এর পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে বেসামরিক মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে এবং তারা ‘বিষয়টি পর্যালোচনায় রেখেছে’।

এর আগে ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানায়, কিছু সেনাকে সরাসরি ‘জনগণের ওপর গুলি চালানোর’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এমন দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সেনা।

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত, বাড়ছে আশঙ্কা

উত্তর গাজার বড় একটি অংশ জুড়ে আবারও সেনা অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। বহু পরিবারকে আবারও গৃহত্যাগী হতে হচ্ছে। ট্যাংক নিয়ে ঢুকে পড়েছে জেইতুনের অভ্যন্তরে। স্কুল ও ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি ও বোমা বর্ষণ চলছে।

এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা শুনেছি যুদ্ধবিরতি হতে পারে। কিন্তু এখানে প্রতিদিনই মৃত্যু আর বিস্ফোরণ।”

জাতিসংঘের হিসাবে, গাজার ৮০ শতাংশ এলাকা বর্তমানে হয় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে অথবা জোরপূর্বক স্থানান্তরের হুমকিতে রয়েছে।

যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে

এই হামলাগুলোর মধ্যেই ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে এ আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার।

তবে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনও আলোচনায় অগ্রগতি হয়নি, তবে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। হামাসের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আগ্রহী এবং আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top