জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার আলোচনায় ঐকমত্যের অভাব, জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার আলোচনায় মৌলিক প্রস্তাবগুলো নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। ১৬ জুলাই “জুলাই সনদে” স্বাক্ষর করার লক্ষ্য থাকলেও, বর্তমান আলোচনার গতি এবং দলগুলোর অনমনীয় অবস্থান সেই লক্ষ্যকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আলোচনার অগ্রগতি: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বে প্রায় ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও, সাত দিনের আলোচনায় মাত্র ৯টি বিষয়ে কথা হয়েছে এবং এর মধ্যে কেবল দুটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো হলো: সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এবং বিরোধী দলগুলোকে তাদের আসনসংখ্যার অনুপাতে সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ দেওয়া।

এছাড়াও, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন – এই প্রস্তাব নিয়ে দলগুলো মোটামুটি একমত হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি। বিএনপি ন্যাশনাল কন্সটিটিউশনাল কাউন্সিল (এনসিসি) বা এ ধরনের কোনো কমিটি গঠনের বিধান না রাখার শর্তে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকালের বিষয়টি মেনে নিতে রাজি হয়েছে।

যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে (এবং যেখানে ঐকমত্যের অভাব রয়েছে):

  • সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ (ঐকমত্য হয়েছে)
  • বিরোধী দল থেকে সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা (ঐকমত্য হয়েছে)
  • ১০০ নারী আসনে সরাসরি ভোট
  • দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ
  • প্রধান বিচারপতি নিয়োগ
  • জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন
  • রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল
  • সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি

যেসব বিষয়ে আলোচনা বাকি: এখনো নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা, সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি, জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রক্রিয়া, স্থানীয় সরকারে নারী প্রতিনিধিত্ব, উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি এবং জেলা সমন্বয় কাউন্সিল গঠন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা শুরুই হয়নি।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া: জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি দল মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে ঐকমত্যের অভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিএনপি এই প্রস্তাবগুলোর বিরোধিতা করছে, যা আলোচনার প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলছে। বিভিন্ন দলের নেতারা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে অনমনীয় থাকায়, ঐক্যের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় বাড়ছে।

কমিশনের প্রত্যাশা: যদিও আলোচনায় গতি ধীর, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ আশা প্রকাশ করেছেন যে, এনসিসির পরিবর্তে নিয়োগ কমিটির প্রস্তাব এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে অধিকাংশ দলের সমর্থন আগামী ২ জুলাইয়ের আলোচনায় আরও অগ্রগতি নিয়ে আসবে। কমিশন আশা করছে, জুলাইয়ের মধ্যেই আলোচনা সম্পন্ন করে “জুলাই সনদ” ঘোষণা করা সম্ভব হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top