অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন অধ্যাপক ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করলেন অধ্যাপক ইউনূস: অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বক্তব্য


যুক্তরাজ্যে সরকারি সফরের সময় বিবিসিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের নির্বাচন, রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন এবং রোহিঙ্গা সংকটসহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে খোলামেলা বক্তব্য দিয়েছেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ

অধ্যাপক ইউনূস দাবি করেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি বরং তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নেবে— আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকবে কি না।

তিনি এ-ও বলেন, নির্বাচন হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, তবে এই অন্তর্ভুক্তি নির্ধারিত হবে জনগণের অংশগ্রহণ দিয়ে, নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের উপস্থিতির ওপর নয়। “মানুষ যদি ভোট দিতে পারে, সেটাই যথেষ্ট,”— এমন মন্তব্য করে তিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে জনগণকেন্দ্রিক বলেই ব্যাখ্যা করেন।

শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ও বিচার প্রসঙ্গ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং তার বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও বক্তব্য দেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি জানান, শেখ হাসিনার দেশে ফেরানো হবে আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাই একমাত্র পথ। জোর করে কাউকে ফিরিয়ে আনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”

ভারত সরকারের ভূমিকা নিয়ে তিনি সরাসরি কিছু না বললেও, শেখ হাসিনার বারবারের বক্তব্য প্রচারের কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এর প্রভাব রয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন।

সমালোচকদের দমন নাকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা?

সাক্ষাৎকারে সরকারবিরোধী দল ও ব্যক্তিদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক ইউনূস তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকারকে আগের সরকারের সঙ্গে তুলনা করা অবাস্তব এবং ভুল ধারণার প্রতিফলন।

রোহিঙ্গা সংকট: সমাধান শুধুই প্রত্যাবাসন

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে অধ্যাপক ইউনূস জানান, বাংলাদেশ মানবিক দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তবে তিনি এটাও বলেন যে, দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের সমাজে একীভূত করার পক্ষে নয় তার সরকার। “প্রত্যাবাসনই একমাত্র বাস্তবসম্মত সমাধান,”— বলেন ইউনূস।

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় খাদ্য ও মানবিক সহায়তায় আগ্রহী হলেও, মিয়ানমারে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দিকটি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ক্যাম্পবাসী রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি কঠিন হলেও, স্থানীয়দের ক্ষোভ এবং সীমিত সম্পদের কারণে বাংলাদেশে তাদের স্থায়ী বসবাস সম্ভব নয় বলে মত দেন তিনি।


বিশ্লেষণ:

এই সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস তার সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছেন সরাসরি, কখনো দৃঢ়ভাবে আবার কখনো কৌশলীভাবে। তিনি যে একটি সংঘাতপূর্ণ ও জটিল রাজনৈতিক ও মানবিক বাস্তবতার মধ্যে কাজ করছেন, তা স্পষ্ট। তবে একই সঙ্গে তার সরকারের নীতিগত দিকনির্দেশনা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলোরও আভাস পাওয়া যায়।

এবারের সাক্ষাৎকার বাংলাদেশে নির্বাচন, মানবাধিকার ও শরণার্থী নীতি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক ও আলোচনার ক্ষেত্র উন্মুক্ত করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top